এম মনছুর আলম, চকরিয়া:

কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে ও মাতামহুরী নদী দিয়ে প্রবাহিত উজান থেকে নেমে আসা পাহড়ি ঢলের পানিতে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হয়েছে। এতে চকরিয়া পৌর শহর সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বানের পানির ¯্রােত মাতামুহুরী ব্রিজ পয়েন্টে বিপদ সীমার ২-৩ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বানের পানি চকরিয়ার একাধিক ইউনিয়নের সড়কের উপর উপচে পড়ায় চিরিঙ্গা শহরের সাথে অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে পানি সহজে সরে যেতে না পেরে ও বানের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় উপজেলার অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, লাগাতার ভরি বর্ষণে চকরিয়া পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চকরিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আমাইন্যাচর, কাজির পাড়া,২নং ওয়ার্ডের জেলে পাড়া, হালকাকারা, মৌলভীর চর, ৩নং ওয়ার্ডের তরছ পাড়া, ও ৮নং ওর্য়াডের নামার চিরিংগা, কোচ পাড়া, ও ৯নং ওয়ার্ডের মৌলভীর কুম সহ অনেক স্থানে বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক পরিবার রান্না বান্নার কাজ সারতে গিয়ে তাদের হিমশীম হেতে হচ্ছে। শতশত মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। পৌর ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুজিবুল হক জানান, ভারিবর্ষণে লামার চিরিংগা গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। কোচপাড়া ও মাষ্টারপাড়ার একাধিক বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও পৌরশহরের গুরুত্বপূর্ন সড়ক গুলোতে যান চলাচল করতে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কোচ পাড়া এলাকায় ১ নং পৌর শহর রক্ষা বাধঁটি ঝুকির মধ্যে রয়েছে।

সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানান, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি মাতামুহুরী নদীতে বাড়ার সাথে সাথে তার ইউনিয়নের উত্তর মানিকপুর ও দক্ষিণ সুরাজপুর গ্রামের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছে অন্তত শতাধিক পরিবার।

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার জানান, তার ইউনিয়নের ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদ, হিন্দুপাড়া, বিবিরখিল, গোবিন্দপুর, দক্ষিণপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কয়েকটি গ্রামের মানুষ বর্তমানে নৌকায় করে চলাচল করছে। মাতামুহুরী নদী, হারবাং ছড়া ও সোনাইছড়ি খালের পানিতে এই অবস্থা হয়েছে বলে তিনি জানান।

কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান জানান, দুইদিনের ভারি বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি হু হু করে বাড়ছে মাতামুহুরী নদীতে। ভারি বর্ষণ আরো কয়েকদিন স্থায়ী হলেই ভয়াবহ বন্যা দেখা দেবে। তবে এখনো (গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত) মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও ঢলের পানি নদীর দুইতীর উপচে পড়ার মতো উপক্রম হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দিন মোঃ শিবলী নোমান জানান, উপজেলার বরইতলী ও কাকারা ইউনিয়ন পরিদর্শন করে দেখা গেছে দ্ইু ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। বরইতলী ইউনিয়নের ডেইঙ্গা কাটা এরাকায় বন্যার পানি বাড়ি ঘরে ছুই ছুই অবস্থা। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এ দুইটি ইউনিয়নে বন্যার পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে আগামী ২-৩ দিন অত্র এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পাহাড় ধস ও নদী ভাঙ্গনের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।

চকরিয়া উপজেলায় ১৮ ইউনিয়নের মধ্যে হারবাং, বরইতলী, কৈয়ারবিল, বিএমচর, কাকারা, ফাঁসিয়াখালী, লক্ষ্যারচর, ডুলাহজারা, ও খুটাখালি ইউনিয়নে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত জনসাধারণকে বন্যা, পাহাড় ধস ও ভাঙ্গন মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে। তাই সম্ভাব্য ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে জানমাল বাঁচাতে সবকটি ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় সতর্ক করা হয়েছে।

চকরিয়া-মহেশখালী সড়কের বাটাখালী অংশে বন্যার পনিতে সড়ক ডুবে যাওায় গতকাল এ সড়কে যানবাহন চলাচল করেনি। চিরিঙ্গা-মগনামা সড়কের পহরচাঁদা থেকে চড়াপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে যায়। জিদ্দাবাজার-মানিকপুর সড়কও ঢলের পানিতে তলিয়ে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান জানান,চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর তীরের কন্যারকুম, কইজ্যারদিয়া, পুরুত্যাখালী এলাকার বেড়িবাঁধের কিছু অংশ চরম ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকাও আছে।